খাসখবর বিশেষ সংবাদ : চট্টগ্রামের পুরো শহর জুড়ে ১০টি ভাগে ভাগ হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জেলা প্রশাসনের ১০ ম্যাজিস্ট্রেটের নের্তৃত্বাধীন পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত।
করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে যে নির্দেশনা দিয়েছে তা কার্যকর করতেই নগড়জুড়ে একযোগে এসব অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
লকডাউন না মেনে জনসাধারনের চলাচল, মাস্ক না পরা, মটরসাইকেলে ভাড়ায় আরোহী নেয়ার বিষয়ে সতর্ক করায় অভিযানের মূল উদ্দ্যেশ্য। তবে বিভিন্ন এলাকায় জরিমানাও করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায়।
লকডাউনের প্রথম দিন কেমন ছিল চট্টগ্রাম শহর : করোনার দ্বিতীয় ধাপের লকডাউন এ প্রথম দিনের চট্টগ্রাম মহানগরীর অবস্থান জানতে সোমবার সকাল থেকেই গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রধান প্রধান সড়কে বিরাজ করছে হরতালের পরিবেশ। সকাল থেকেই বন্ধ রয়েছে প্রায় সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল।
এদিকে লকডাউনেও সীমিত পরিসরে খোলা রয়েছে নগরীর অধিকাংশ সরকারি, বেসরকারি অফিস ও পোশাক কারখানা। ফলে নগরীর বিভিন্ন স্থানেই ফাঁকা রাস্তাঘাটে শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষ চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে রাস্তায় গণপরিবহণ তুলনামূলক খুব কম থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে এসব অফিস গামী মানুষ।
মাঝে মধ্যে দু-একটি বাস ও কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশা দেখতে পেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। নির্ধারিত সময়ে অফিস যেতে করোনার ভয় উপেক্ষা করে গাদাগাদি করেই অনেকেই বাসে উঠছে। আবার করোনার ভয়ে পিছু হটে সিএনজি খুঁজছে কেউ কেউ। সিএনজির ভাড়াও হঠাৎ বেড়ে গেছে ৪ গুনেরও বেশি।
সকাল সোয়া ৯টার সময় বন্দরটিলায় কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য নগরীর কোতোয়ালির মোড়েই দীর্ঘ এক ঘন্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করছিলেন রাহুল নামে এক যুবক।
তার সাথে কথা হলে তিনি জানায়,একদিকে সরকারের লকডাউন অন্যদিকে কারখানা মালিকের হুঁশিয়ারি। ফলে চাকরি বাঁচাতে অফিসে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তায় এসে পরিবহণ পাচ্ছি না। সিএনজি পেলেও যেতে পারছিনা কারণ চালক যে ভাড়া দাবী করছে তা পকেটে নেই।
পুরো শহর জুড়েই দেখা গেছে রিক্সার রাজত্ব। তাদেরও এখন পৌষমাস চলছে। দুরের পথের গন্তব্যে যেতে হলে নির্ধারিত ভাড়ার চাইতেও বহুগুন বেশি ভাড়া দাবী করছে যাত্রীদের কাছ থেকে। যা অনেক শ্রমিকের কাছে অসাধ্য।
আলী রোকন নামে মধ্য বয়সী এক কর্মজীবি লোক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানুষের দুঃসময়কে পুঁজি করে তিনগুন দাম বাড়িয়ে দিয়েছে রিক্সা ভাড়া। নিউ মার্কেট থেকে আগ্রাবাদ যেতে স্বাভাবিক সময়ে ৫০ টাকা ভাড়া নিলেও এখন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা দাবী করছে।
অন্যদিকে চাকরি ও পেট বাঁচাতে কর্মস্থলে যাওয়ার লক্ষ্যে অনেক শ্রমিকদের দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটেই অতিক্রম করতে দেখা গেছে। তবে কিছু প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ব্যবস্থায় কর্মীদের অফিসে আনা-নেওয়ার জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করেছে।
লাকী আক্তার নামে এক গার্মেন্টস শ্রমিকের সাথে কথা হলে সে জানায় সকালে অফিস যাওয়ার উদ্দ্যেশে ঘর থেকে বের হয়েছি। রাস্তায় এসে কোন গাড়ি পাচ্ছি না। তাই চাকরি বাঁচাতে পায়ে হেটেই ফ্রিপোর্ট অফিসে যাচ্ছি।
বিভিন্ন সড়কে কিছু কিছু ব্যাক্তিগত গণপরিবহণ ও দুয়েকটি সরকারি স্টিকারযুক্ত গাড়ি এবং এ্যাম্বুলেন্স চলতে দেখা গেছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে।
ভাম্রমান আদালত : সোমবার (৫ এপ্রিল) সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর অক্সিজেন, বালুছড়া এলাকায় জেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালতের নের্তৃত্ব দিচ্ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা আফরোজ।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযানে ১২ টি মামলার বিপরীতে ১ হাজার ৮শ টাকা জরিমানা করেন এ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
আগামীতে জরিমানার পরিমান আরো বৃদ্ধি করাসহ আগের চাইতে আরো অধিক কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা আফরোজ।
তিনি জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম নগরির গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে জেলা প্রশাসনের ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্রেটেটের নেতৃত্বে ১০ টি টিম ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করছে।
করোনার দ্বিতীয় ধাপ মোকাবেলার জন্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাস্তবায়নের উদ্দ্যেশে এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের আদেশে পুরো শহরজুড়ে ম্যাজিস্ট্রেটগণ পর্যবেক্ষণ করছে।
তিনি বলেন, মূলত দেখা হচ্ছে সকলে মাস্ক ব্যবহারটা নিশ্চিত করছেন কিনা, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন কিনা, যাত্রীবাহি বাসগুলো যাত্রী আনা নেওয়া করছে কিনা এবং জরুরি প্রয়োজনে খোলা রাখা দোকানগুলোতে ক্রেতা বিক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি মানছে কিনা এবং নগরীর কোথাও জনসমাগম হচ্ছে কিনা, সে বিষয়গুলি আমরা দেখছি।
অন্যদিকে নগরীর শাহ আমানত সেতু নতুন ব্রীজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াসমিন এবং এ কে খান এলাকায় পরিচালিত অভিযানের নের্তৃত্ব দিচ্ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন।
যতদিন লকডাউন থাকবে এবং মহামারী করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হয় ততদিন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তারা জানায়।
খখ/প্রিন্স