খাসখবর জাতীয় ডেস্ক: দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতির ছবি পাঠ্যবইয়ে রাখা নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে। গণ–অভ্যুত্থানের সময় যারা বীরের ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদেরকে পেটানো হয়েছে। তার মানে হলো, ফ্যাসিবাদ এখনো জীবন্ত রয়েছে। কথাগুলো বলেছেন লেখক–অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন সলিমুল্লাহ খান। ‘ফ্যাসিবাদের জমানায় শিকারি সাংবাদিকতা’ শিরোনামে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) সেমিনারটি আয়োজন করে।
সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের একটি দিক হচ্ছে, অতীতের ঐতিহাসিক ঘটনাবলি নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে নেওয়া। যেমন টিভির নাম হয়েছে একাত্তর বা একুশে—এগুলো হলো আত্মসাৎকরণ। এগুলো ফ্যাসিবাদের লক্ষণ। আপনারা বলতে পারেন, এগুলো তো জাতীয় প্রতীক। নাম দেওয়া সমস্যা না; কিন্তু নাম দিয়ে যা করে, তা তো ভয়াবহ।
সাংবাদিকতা শুধু জনমত তৈরি করে না উল্লেখ করে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক মতও তৈরি করে, থিউরিও তৈরি করে, ক্ষমতাও তৈরি করে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিগত সময়ে একধরনের ‘শিকারি সাংবাদিকতা’র উদ্ভব ঘটেছে। যার মাধ্যমে মুহূর্তেই কাউকে অপরাধী বানিয়ে শাস্তি দেওয়া যেত। এ ধরনের সাংবাদিকতার উত্থানে ভারতীয় হাইকমিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
আ-আল মামুন বলেন, ভারতীয় হাইকমিশন শুরুতে বাংলাদেশের অনেকগুলো গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের সঙ্গে একধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। পরে ঢাকা শহরের মধ্য পর্যায়ের সাংবাদিকদের সঙ্গে একধরনের সম্পর্ক গড়েছে। ২০১৮ সালের পর সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিকদের তাদের ‘পে রোলের’ অধীন নিয়ে এসেছে। তারা যে কাউকে শিকার করতে চাইলে এই সিস্টেম একসাথে কাজ করেছে।
বাংলাদেশে ‘শিকারি সাংবাদিকতা’ উত্থানের কারণ নিয়ে আ-আল মামুন বলেন, ‘ইউরোপ ও আমেরিকায় এই শিকারি সাংবাদিকতা দেখা যায়নি। বাংলাদেশে ঘটেছে। কারণ, আমাদের সংবাদ ব্যবস্থায় প্রপাগান্ডা (অপপ্রচার) চালানোর সুযোগ আছে। কিন্তু তাৎক্ষণিক একটা মব তৈরি করে কাউকে অপরাধী করা যায় না। শিকারি সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে মুহূর্তেই কাউকে (ক্রিমিনালাইজ) অপরাধী করে ফেলা যায়। এখানে গোয়েন্দা সংস্থা, রাষ্ট্রীয় লোকজন এবং সংবাদপত্রের একধরনের সংযোগ কাজ করে। এটি দুইভাবে কাজ করে। একদিকে সে সমাজের ভাষাগুলোকে দমন করে। অন্যদিকে সমাজের ভাষাগুলোকে সে শিকার করে।’
অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, বাংলাদেশে ‘শিকারি সাংবাদিকতা’র শুরু হয়েছে ২০০৭ সালে। সে সময় শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করার সময় এটা দেখা গেছে। পরে তা বিস্তৃত হতে পারেনি; কিন্তু মামুনুল হকের রিসোর্ট–কাণ্ড বা পরী মণির মাদক–কাণ্ডে তা পুনরায় প্রতিফলিত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ‘শিকারি সাংবাদিকতা’র একটি উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের কোটা সংস্কারের আন্দোলনের সময় এক দিন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে ফোন করেন। তিনি আমার কাছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চান। আমি তাঁকে বললাম, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনটি যৌক্তিক। পরে দেখলাম, সব কটি মূলধারার গণমাধ্যমে আমাদের এই ফোনালাপ প্রচার করা হচ্ছে। লন্ডনে বসে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র—এমন একটি ভাব। হঠাৎ দেখলাম, একটি টিভি রাত ১১টায় টকশো ডেকে বসল।’
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খোরশেদ আলম। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ।
খখ/মো মি