জেনে নিন দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

খাসখবর লাইফ স্টাইল ডেস্ক: দুধ চা আমাদের দেশে এক অতি পরিচিত পানীয়। অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ দুধ চা পান না করলে যেন দিন শুরু হয় না। আবার অনেকেই দিনের ক্লান্তি দূর করতে কিংবা অফিসের ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে এক কাপ দুধ চা খেয়ে একটু স্বস্তি পান।

thai foods

তবে এই জনপ্রিয় পানীয়টির যেমন কিছু উপকারিতা রয়েছে, তেমনি কিছু অপকারিতাও রয়েছে, বিশেষ করে অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে। আসুন জেনে নেই দুধ চা খাওয়ার কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা।

দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা:
১. মানসিক সতেজতা বৃদ্ধি করে
দুধ চায় ক্যাফেইন থাকে যা মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এবং ক্লান্তি দূর করে মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। এক কাপ দুধ চা সকালে কিংবা কাজের মাঝে মন সতেজ রাখতে সহায়ক।

২. হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা
দুধ চা হজমের জন্য উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যদি এর সঙ্গে আদা বা এলাচ যোগ করা হয়। এটি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমাতে ও পেটের অস্বস্তি দূর করতে সাহায্য করতে পারে।

৩. ঠান্ডা-কাশিতে উপকার
দুধ চায়ে আদা, লবঙ্গ, দারুচিনি বা তুলসী পাতা যোগ করলে এটি ঠান্ডা-কাশি, গলা ব্যথা ইত্যাদিতে স্বস্তি দেয়। এটি ঘরোয়া উপায়ে আরামদায়ক চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহার হয়।

৪. শক্তির যোগান দেয়
দুধে থাকা প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম এবং চায়ের ক্যাফেইন একত্রে শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। এটি বিশেষ করে সকালে ঘুম ঘুম ভাব কাটাতে কার্যকর।

৫. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য
চায়ের মধ্যে থাকে পলিফেনলস নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষকে সুরক্ষা দেয় এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

৬. মানসিক চাপ কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে, চায়ের মধ্যে থাকা কিছু উপাদান যেমন L-theanine, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

দুধ চা খাওয়ার অপকারিতা:

১. অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ
দুধ চা-তে থাকা ক্যাফেইন যদি অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়, তাহলে এটি অনিদ্রা, মাইগ্রেন, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া এবং উদ্বেগ বাড়াতে পারে। তাই দিনে ২-৩ কাপের বেশি চা খাওয়া ঠিক নয়।

২. হজমে সমস্যা
দুধ চা অতিরিক্ত পান করলে হজমে সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে যদি খালি পেটে খাওয়া হয়। এতে গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা পেট ফাঁপা হতে পারে।

৩. আয়রন শোষণে বাধা
চায়ে থাকা ট্যানিন নামক উপাদান শরীরে আয়রনের শোষণ কমিয়ে দেয়। যারা অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন বা রক্তস্বল্পতার সমস্যা আছে, তাদের জন্য দুধ চা ক্ষতিকর হতে পারে।

৪. ওজন বাড়ার সম্ভাবনা
চা-তে যদি চিনি যোগ করা হয়, তবে তা অতিরিক্ত ক্যালরি সরবরাহ করে, যা ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। দুধেও কিছুটা চর্বি থাকে, যা অতিরিক্ত হলে শরীরের ওজন বাড়াতে পারে।

৫. হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট
বেশ কিছু গবেষণায় বলা হয়, নিয়মিত অতিরিক্ত দুধ চা পান করলে শরীরের হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্য ব্যাহত হতে পারে। এটি মহিলাদের ক্ষেত্রে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলে প্রভাব ফেলতে পারে।

৬. দাঁতের ক্ষয়
দুধ চা ও চিনি একত্রে পান করলে দাঁতের ওপর প্রভাব ফেলে। দাঁতে প্লাক জমা, দাগ পড়া এবং দাঁতের এনামেল ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অতিরিক্ত কিছু বিষয়:
> দুধ চা তৈরি করার সময় যদি খুব বেশি ফুটিয়ে নেওয়া হয়, তবে চায়ের পুষ্টিগুণ কমে যেতে পারে এবং স্বাদও তেতো হয়ে যেতে পারে।
> যারা ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্ট (দুধ সহ্য করতে পারেন না), তাদের জন্য দুধ চা ক্ষতিকর হতে পারে। তাদের ক্ষেত্রে দুধ ছাড়া চা ভালো বিকল্প হতে পারে।

দুধ চা উপভোগের পরামর্শ:
> দিনে ১-২ কাপ দুধ চা গ্রহণ করুন।
> চিনি কম ব্যবহার করুন বা বিকল্প মিষ্টি উপাদান ব্যবহার করুন (যেমন: গুড়, খেজুরের গুঁড়)।
> চায়ের সঙ্গে আদা, এলাচ, দারুচিনি বা তুলসী পাতা যোগ করলে এটি স্বাস্থ্যকর হয়।

> খাবারের অন্তত ১ ঘণ্টা আগে বা পরে চা পান করুন, যাতে আয়রন শোষণে সমস্যা না হয়।

উপসংহার:
দুধ চা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটি যেমন ক্লান্তি দূর করে মনকে সতেজ রাখে, তেমনি অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত গ্রহণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই দুধ চা পান করতে হবে পরিমিতভাবে এবং স্বাস্থ্যকর উপায়ে। সঠিক মাত্রায় দুধ চা পান করলে এটি আপনার দৈনন্দিন জীবনে উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।

খখ/মো মি

আগেভারত-বাংলাদেশ রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্প স্থগিত
পরে“৩৬ দিনে কোনো অভ্যুত্থান কিংবা বিপ্লব হয় না”- রুমিন ফারহানা