বাঁশখালীতে সংঘর্ষ : আরো ২ শ্রমিকের মৃত্যু-তথ্য গোপনের চেষ্টা!

লাশ দাফনের পর জানা যায় মৃত্যুর খবর
বাঁশখালী, কয়লা বিদ্যুৎ,পুলিশ,শ্রমিক,সংঘর্ষ,মৃত্যু
thai foods

খাসখবর নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ আরো দুই শ্রমিক মারা গেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে অজ্ঞাত কারণে গণমাধ্যমের কাছে প্রথম দিকে মুখ খুলতে চাইনি সংশ্লিষ্ট কেউই।

thai foods

পরে একাধিক গণমাধ্যমকর্মীর চেষ্টা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে অবশেষে দুই শ্রমিকের মৃত্যুর সত্যতাতা পাওয়া যায়।

নিশ্চিত হয়ে সংবাদ প্রকাশে অনেক সময় লেগে যায় সংবাদকর্মীদের। এসময় অনেকের মুখেই শোনা যায় মৃত্যুর খবরের তথ্য গোপনের চেষ্টা করা হয়েছে।

জানা যায়, আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ)তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিমুল আহমেদ নামে এক শ্রমিক মারা যান।

নিহত শ্রমিকের নাম শিমুল আহমেদ তিনি সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গল এলাকার আব্দুল মালেকের ছেলে এবং রাজেউল ইসলাম (২৫) দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বেতদীঘি ইউনিয়নের নথন জামদানি গ্রাম দিনমজুর আব্দুল মান্নান মণ্ডলের ছেলে।

চমেক হাসপাতালে মারা যাওয়া শ্রমিকের তথ্যটি নিশ্চিত করেন চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভূঁইয়া। অন্যদিকে পার্কভিউ হাসপাতালে শ্রমিক মৃত্যুর তথ্যটি নিশ্চিত করেন ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন।

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, বাঁশখালী বিদ্যুৎকেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় শিমুল আহমেদ নামে এক শ্রমিক মারা গেছে। তার কোমরের নিচে গুলি লেগেছিল। মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

এদিকে নগরীর বেসরকারি পার্ক ভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজেউল ইসলাম (২৫) নামে আরও এক শ্রমিকের মৃত্যুর হয়েছে গত সোমবার রাতে।

মৃত্যুর পর দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা কর্মকর্তার কাছ থেকে মুভমেন্ট পাস নিয়ে পরিবারের লোকজন চট্টগ্রামে এসে লাশ নিয়ে দাফন শেষ হওয়ার পরেই জানা জানি হয় সে বাঁশখালীর ঘটনায় মারা গেছে।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, বাঁশখালীতেসিংঘর্ষের ঘটনায় আহত শ্রমিক রাজেউল ইসলামকে চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি করান তার সহকর্মীরা।

এরপরদিন তার অপারেশন করা হলেও ১৯ এপ্রিল সোমবার মধ্যরাতে চিকিৎসাধিন অবস্থায় রাজেউল মারা যান। পরে তার পরিবার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমার কাছ থেকে মুভমেন্ট পাস নেন। মঙ্গলবার রাতে রাজেউলের লাশ তার গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়েছে বলে পরিবারের কাছ থেকে জানতে পারি।

এদিকে শ্রমিক রাজেউলের মৃত্যুর খবরটি সম্পর্কে পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম দিকে নীরব ভুমিকা পালন করলেও এক পর্যায়ে গণমাধ্যমের জোরাজুরিতে রাজেউলের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন পার্কভিউ হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার তালুকদার জিয়াউর রহমান শরীফ।

এরআগে গত শনিবার সোয়া ১১টার দিকে দাবি আদায়ে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলে ৪ জন এবং চমেক হাসপাতালে নেয়ার পর আরো একজনের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন- আহমদ রেজা (১৮), রনি হোসেন (২২), শুভ (২৪), মো. রাহাত (২৪) ও মো. রায়হান (২৫)।

ওইদিন ১৭ জন গুলিবিদ্ধসহ আরো বেশ কয়েকজন শ্রমিক গুরুতর আহত হন। ক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের হামলায় পুলিশের তিন সদস্যও আহত হয়। পরে এ ঘটনায় পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তাছাড়া একই দিন রাতে সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছছে বাঁশখালী থানায়। পুলিশ ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কতৃর্পক্ষ পৃথক মামলা দুটি দায়ের করেছেন।

বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এস আলম গ্রুপের এসএস পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে ও চীনা প্রতিষ্ঠান সেপকো ও এইচটিজির মধ্যে চুক্তি হয়।

২০১৭ সাল থেকে গণ্ডমারা এলাকায় প্রায় ছয় শ একর জমিতে আড়াই শ কোটি ডলার ব্যয়ে এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়।

চুক্তি হওয়ার পর থেকেই গ্রামবাসীদের একটি পক্ষ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করেন পরিবেশ দূষিত হওয়ার কথা বলে। আরেকপক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পক্ষ নেয়।

এর জেরে ২০১৬ সালের এপ্রিলে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। তখন নিহত হন চার গ্রামবাসী। আহত হয় পুলিশসহ অন্তত ১৯ জন। এ ঘটনার পাঁচ বছর পর ফের হতাহতের ঘটনা ঘটলো বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায়।

খখ/প্রিন্স

আগেরান পাহাড়ের পথে টাইগাররা
পরেচট্টগ্রামে নতুন ২৭৮ জনসহ আক্রান্ত ছাড়াল ৪৮ হাজার,একদিনে ৩ মৃত্যু