খাসখবর বিশেষ সংবাদ : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মসনদ আগামী পাঁচ বছর কার দখলে থাকবে? দিদি না মোদির-আবারও একবার মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস নাকি বিজেপি শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে? এই রায় স্পষ্ট হবে ২ মে রবিবার।
আট দফায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর এদিন ভোট গণনার পর ফল ঘোষণা করা হবে। আগামী কাল (রবিবার) দুপুরের পর পরই অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে যাবে কোন দল বা জোট নবান্নে (পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় ও মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়) পাঁচ বছরের জন্য জায়গা করে নিচ্ছে।
এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ বুথফেরত জরিপে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয় পক্ষই দাবি করছে নির্বাচন জরিপের ফল যাই হোক না কেন তারাই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসছে।
ঝুলন্ত বিধানসভার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে শেষ পর্যন্ত কিং মেকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে সিপিএম, জাতীয় কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট নিয়ে গঠিত সংযুক্ত মোর্চা।
নির্বাচন-পরবর্তী কয়েকটি জরিপগুলোর বেশ কয়েকটিতে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনার কথা বলা হলেও, তার বিপরীত মতও রয়়েছে কোনো কোনো জরিপে।
ওইসব জরিপে বলা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের তুলনায় এগিয়ে থাকবে বিজেপি। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা অনেক কমছে এটা নিশ্চিত। অন্যদিকে বিজেপিও ম্যাজিক ফিগার ১৪৭ আসনের কাছাকাছি বা বেশি পেতে পারে বলে কিছু জরিপের ফল বলছে। আর সংযুক্ত মোর্চা সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ আসন পেতে পারে বলে জরিপগুলো বলছে।
আর এটা নিয়েই আশায় বুক বাঁধছে সিপিএম, জাতীয় কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট নিয়ে গঠিত সংযুক্ত মোর্চা। তাদের দাবি, বিজেপি বা তৃণমূল কংগ্রেস কেউই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। সেক্ষেত্রে সরকার গঠনে তাদের সমর্থন জরুরি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মমতা ব্যানার্জির তৃণমূলকে সরাতে বিজেপির নিরঙ্কুশ জয়ের বিকল্প নেই। কারণ ঝুলন্ত বিধানসভা হলে সংযুক্ত মোর্চার সমর্থন নিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপিকে এই মোর্চার সমর্থন করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯৪ আসনের মধ্যে ২১১ আসন পেয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। সিপিএম, জাতীয় কংগ্রেস জোট পায় ৭৬ আসন আর বিজেপি তিনটি। তবে সেবার নির্বাচন-পরবর্তী কোনো সমীক্ষাতেই তৃণমূল কংগ্রেসকে ১৭০ আসনের বেশি দেওয়া হয়নি।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সামনের সারিতে চলে আসে বিজেপি। ৪২ লোকসভা আসনের মধ্যে তারা পায় ১৮ আসন। বিধানসভা আসনভিত্তিক বিশ্লেষণ বলছে, লোকসভার ফল অনুযায়ী তৃণমূল ১৬৪, বিজেপি ১২১ এবং সিপিএম, জাতীয় কংগ্রেস ৯ আসনে এগিয়েছিল।
পশ্চিমবঙ্গে এবার দুই আসনে প্রার্থীর মৃত্যুতে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়েছে। ২৯২ আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ম্যাজিক ফিগার ১৪৭ আসন। এই আসন যে দল পাবে পশ্চিমবঙ্গ আগামী পাঁচ বছর তাদের দখলে থাকবে।
আট দফার নির্বাচনে সাড়ে ৫ কোটির কাছাকাছি ভোট পড়েছে। কোনো দলকে সরকারে আসতে হলে আড়াই কোটির কাছাকাছি ভোট পেতে হবে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে অন্তত ১৫ লাখ ভোট বেশি পেতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল বলছে, এবার লড়াই হাড্ডাহাড্ডি হবে। জয়-পরাজয়ের পার্থক্য গড়ে দেবে কয়েক লাখ ভোট। জয়ী এবং দ্বিতীয় হওয়া দলের আসনের ব্যবধান খুবই কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ তৃণমূল বা বিজেপি যে দলই পরাজিত হোক না কেন, তারা প্রবল বিরোধী হিসেবেই বিধানসভায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিজেপি জিতলেও তাদের আসন সংখ্যা থাকতে পারে ১৫৫টির মতো। পক্ষান্তরে কোনো দলই যদি একক গরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে ফলাফল পরবর্তী সরকার গঠনে দৌড়ঝাঁপ, তৎপরতা চলবে।
ভারতের লোকসভায় কিংবা বিভিন্ন রাজ্যে বৃহত্তম দলের একক গরিষ্ঠতা না থাকায় সরকার গড়তে জোট গঠনের প্রক্রিয়া হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তা বিরল।
শেষবার পশ্চিমবঙ্গে এরকম হয়েছিল ১৯৭১ সালে। তখন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছিল। পরবর্তী ৫০ বছরে ১০টি সরকার গঠিত হয়েছে। প্রতিবারই ক্ষমতায় আসা দল বা জোট দুই-তৃতীয়াংশ বা তার কাছাকাছি আসনে জয়লাভ করেছে।
এবার কী হবে, তা জানতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন পশ্চিমবঙ্গের জনগণ। সময় কিন্তু আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি।
খখ/মো মি