খাসখবর বিশেষ খবর : করোনা ভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ ও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ২ সপ্তাহের ১৮ দফা নির্দেশনায় বলা হয়েছে ফের গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ সিট ফাঁকা রাখতে হবে।
আর এ কারণে গণপরিবহণের ভাড়া বৃদ্ধির জন্য মালিকদের আবেদনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সোমবার প্রস্তাব পাঠায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। আবেদনের প্রেক্ষিতে বুধবার থেকে সারা দেশে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন সরকার।
তবে বুধবার সকাল থেকেই চট্টগ্রামের অধিকাংশ সড়কেই চলাচলরত গণপরিবহণে সরকারি এ নির্দেশনা মানছে না চালক ও হেলপাররা। নির্ধারিত ভাড়ার চাইতে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি না করে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করছে তারা।
করোনা মহামারীতে অসহায় হয়ে পড়া মানুষগুলোর কাছ থেকে জোরপূর্বক দ্বিগুণ ভাড়া আদায়ের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে যাত্রীরা। একে তো ভাড়া বেশি তার উপর মিলছে না গাড়ি। যেনো মরার উপর খাড়ার ঘা।
নগরীর জামালখান মোড় থেকে চকবাজার। মাত্র আধা কিলোমিটার দুরত্বে স্বাভাবিক সময়ে গণপরিবহনের ভাড়া ছিল ৫ টাকা। বুধবার (৩০ মার্চ) সকাল থেকে এই ভাড়া হঠাৎ বেড়ে এখন দ্বিগুন। তার উপর পরিবহণে অর্ধেক যাত্রী উঠানোর সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সেটা মানছে না অনেকেই।
ভাড়াও বৃদ্ধি আবার বসার স্থানেও ঠাসা ঠাসা যাত্রী, সব মিলিয়ে গণপরিবহণের চালক ও সহকারীদের সাথে যাত্রীদের তুমুল বাকবিতন্ডা চলছে দিনভর। বুধবার নগরীর কোতোয়ালি টু ফ্রিপোর্ট রুটের প্রায় সকল গণপরিবহণেই একই চিত্র দেখা গেছে।
আজাদুর রহমান সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ি বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার সময় আগ্রাবাদ যাওয়ার উদ্দ্যেশে ৬নং রুটের একটি পরিবহণে উঠেন। তার সিটের পাশে এবং বেশ কয়েকটি সিটে ঠাসা ঠাসা করে যাত্রী নেন চালকের সহকারী।
ভেবেছিলাম হয়তো আগের নিয়মেই ভাড়া নেবেন। কিন্তু গন্তব্যস্থলে পৌছে বাস থেকে নামার সময় ৮ টাকা ভাড়ার স্থানে সে ১৬ টাকা দাবি করেন। দিতে না চাইলে একপর্যায়ে চালক ও সহকারী মিলে যাত্রীদের উপর অশোভন আচরণসহ মারমুখী অবস্থান নেন।
নগরীর শাহ আমানত নতুন ব্রিজ এলাকায় কথা হয় পিকলু সৌম নামে এক স্কুল শিক্ষকের সাথে। ভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি হতাশাগস্থ মনে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা মানুষ; বাকি জীবন ধরে বাসায় বুয়া ছাড়া থাকতে পারলেও বাইরের বাজার ছাড়া, মানুষের সংস্পর্শ ছাড়া থাকা সম্ভব নয়।
তার চেয়েও বড় কথা জীবিকা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। এই সবকিছু যা-ই করতে যাব, রাস্তায় আমাদের বের হতেই হবে। যার জন্য গণপরিবহন ব্যবহারও মুখ্য।
কিন্তু সেখানেও নৈরাজ্য। আমরা কোথায় যাবো। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দুর করতে সুষ্ঠ তদারকির জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ডিসি স্টাফ অফিসার ওমর ফারুক বলেন, আজ থেকে সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী গণপরিবহনে অর্ধেকযাত্রী ও ৬০ শতাংশ ভাড়ায় যানবাহন চলাচল করছে। তবে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর ইতিমধ্যে নগরীতে ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছে।
শুধু নগরী নয় জেলার বিভিন্ন সড়কের অবস্থাও প্রায় একই। বুধবার চট্টগ্রাম থেকে পটিয়া পর্যন্ত সড়ক পথে সরেজমিনে দেখা যায়, এক একটি বাস কোনো স্টপেজে আসলেই শুরু হয় শত মানুষের দৌঁড়ঝাঁপ। তবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের নির্দেশনা মানায় বেশিরভাগই বাসে ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন না।
কোন বাস দাঁড়ালেই পথে অপেক্ষমাণ মানুষরা বাসে উঠার চেষ্টা করেন। তীব্র ধাক্কাধাক্কি করে দু-একজন উঠতে পারেন ঠিকই, তবে দীর্ঘ অপেক্ষমাণ থাকতে দেখা গেছে বেশিরভাগ যাত্রীদের। এমন পরিস্থিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যাত্রীরা।
এমন বাস সংকটে কেউ কেউ বেছে নিচ্ছেন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল সেবা। আবার অনেক যাত্রীকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা দিতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রামের পটিয়া পৌর এলাকার বাসিন্দা শান্তি দাশ জানান, গ্রাম থেকে শহরে আসা হাজার হাজার ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী ও বিভিন্ন পেশার লোকজনও গণপরিবহনের ওপর নির্ভরশীল। হঠাৎ করে সরকারীভাবে গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।
বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানতে গিয়ে পথে পথে যাত্রীদের জটলায় আর দৌঁড়ঝাঁপে কতোটা নিশ্চিত হচ্ছে এই বিধি সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
এর আগে করোনার সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের ৩১ মে থেকে গণপরিবহনে অর্ধেক আসন খালি রাখতে বলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। তখন বাসমালিকদের দাবির মুখে বাসের ভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ায় সরকার।
এর আগে দীর্ঘদিন গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে। তবে করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমে আসায় গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও বাসের সব সিটে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়।
খখ/প্রিন্স